বিভিন্ন কারনে কবুতরের পানি খাওয়ার পরিমান বেড়ে যেতে পারে। পানি বেশী খেলে ড্রপিংস এ পানির পরিমান বেশী থাকবে। কিন্তু ড্রপিংস এ পানির পরিমান বেশী থাকা মানেই কিন্তু পানি বেশী খাচ্চে তা না। কিডনী ঠিক মতো কাজ না করলে বা সমস্যা গ্রস্থ থাকলে স্বাভাবিক পরিমান পানি পান করার পরেও ড্রপিংস এ বেশী পানি দেখা দিতে পারে, এক্ষেত্রে কিডনী সমস্যার কারনে বডি প্রয়োজনীয় পরিমান পানি এবসর্ভ করতে পারছে না। আবার উড়ে আসার পর কবুতরের পানির চাহিদা থাকে কিন্তু সে চাহিদা সারা দিন থাকে না। এটা এক বারের চাহিদা - উড়ে আশার পর।
আমাদের এই আলোচনা হচ্ছে সারা দিন ধরে কবুতরের পানি গ্রহন এর পরিমান বেড়ে গেলে আমাদের কোন কোন দিকে খেয়াল রাখা উচিত।
(১) খাবারে, পানিতে বা গ্রিটে লবন এবং চিনির পরিমান বেশী হলে কবুতর দ্রুত পিপাসার্ত হয়ে পড়ে। ড্রপিংস যদি পাতলা হয় বা ড্রপিংস এর চারিদিকে কম বেশী পানি জমে থকে তবে গ্রিটে লবনের পরিমান বেশী হচ্ছে কিনা সেদিকে নজর দিতে হবে। সাপ্লিমেন্ট যা দেয়া হচ্ছে সেগুলোতে চিনির পরিমান বেশী কিনা সেদিকে খেয়াল করতে হবে। আমরা প্রয়োজনে - অপ্রয়োজনে প্রায়ই খাবার পানির সাথে স্যালাইন দেই কবুতরকে। মনে রাখতে হবে অতিরিক্ত লবন বা চিনি থেকে কবুতর ডিহাইড্রেশনে পড়তে পারে।
লক্ষনঃ
👉 খাবার গ্রহন স্বাভাবিক
👉 আচরন স্বাভাবিক
👉 পানি বেশী খাচ্ছে
👉 জমানো ড্রপিংস এর সাথে পানির পরিমান বেশী।
(২) বেবীদেরকে খাওয়াচ্ছে এমন প্যারেন্টস কবুতর বেশী পানি খায়। এটা স্বাভাবিক অবস্থা যদি এদের ড্রপিংস স্বাভাবিক কঠিন থাকে। এক্ষেত্রে চিন্তিত হবার কারন নেই। কিন্তু ড্রপিংস এ পানি থাকলে সমস্যা। সেক্ষেত্রে ১নং এ বর্ননার দিকে খেয়াল করা দরকার।
লক্ষনঃ
👉 থরে বেবী আছে
👉 খাবার গ্রহন স্বাভাবিক
👉 আচরন স্বাভাবিক
👉 পানি বেশী খাচ্ছে
👉 জমানো ড্রপিংস এর সাথে পানির পরিমান বেশী।
(৩) ইকোলাই এবং ট্রাইকোমোনিয়াসিস (ক্যাংকার) এই দুই রোগের কারনে কবুতরের পিপাসা বেড়ে যায়। ড্রপিংস পাতলা হবে যা ডায়রিয়া। এটা বড় সমস্য। কবুতর অসুস্থ্য হয়ে পড়বে, আশানুরুপ ফ্লায়িং পাওয়া যাবে না, রেসে/টসে কবুতর হারাবে। টেস্ট করা ছাড়া সঠিক কারন ধরা বা বলা মুশকিল।
লক্ষনঃ
👉 খাবার গ্রহন কম
👉 আচরন স্বাভাবিক বা হাল্কা ঝিমানি আছে
👉 পানি বেশী খাচ্ছে
👉 ড্রপিংস এ পানির পরিমান বেশী।
👉 উদ্যাম হীনতা। উড়ার ইচ্ছাহীনতা বা কম উড়া।
ট্রাইকোমোনিয়াসিস বা ক্যাংকারঃ মুখ চেক করে দেখা যায় ক্যাংকারের উপস্থিতি আছে কিনা। কিন্তু মনে রাখতে হবে মুখে ক্যাংকার দেখা না গেলেও গলার ভেতর বা খাদ্যনালীতে ক্যাংকারের উপস্থিতি থাকতে পারে। মূলতঃ সব কবুতরের ভেতরেই কম বেশী ট্রাইকোমোনিয়াসিস উপস্থিত থাকে, সামান্য মাত্রায় এর উপস্থিতির প্রয়োজনও আছে। কিন্তু সেটা নিয়ন্ত্রনের বাইরে চলে গেলেই সমস্যা - কবুতর অসুস্থ্য হয়ে পড়ে।
ক্যাংকার স্পেসিফিক লক্ষন(ওপরে দেয়া প্রথমিক লক্ষনের অতিরিক্ত)ঃ
👉 মুখে হলদে ঘা দেখা দিতে পারে আবার নাও দেখা যেতে পারে।
👉 পালক উষ্কখুষ্ক থাকতে পারে
👉 মুখে রক্ত
ইকোলী বা ইকোলাইঃ ইকোলাই সমস্যা আমাদের দেশে যে কোন লফটে থাকতেই পারে। এটা পানি বাহীত রোগ। তাই খাবার পানির ব্যাপারে বিশেষ সতর্ক থাকতে হবে৷ সব থেকে ভালো উপায় হচ্ছে সব সময় ফুটনো পানি সরবরাহ করা। অথবা ফিল্টার করা পানি দেয়া। ফিল্টার পানি দেয়া হলে ফিলাটারিং সিস্টেমের দিকে খেয়াল রাখা জরুরী। এর বাইরে খাবার পানিতে এসিডিফায়ার ব্যবহার করেও ইকোলাই নিয়ন্ত্রনে রাখার চেষ্টা করা যেতে পারে। এসিডিফায়ারের ভেতর লেবু, হেমিকো পি এইচ, ফ্রাএসি৩৪, এসিভি এগুলো জনপ্রিয়। এছাড়া টক্সিন বাইন্ডার এর সাথেও এসিডিফায়ার থাকে।
ইকোলি স্পেসিফিক লক্ষন(ওপরে দেয়া প্রথমিক লক্ষনের অতিরিক্ত)ঃ
👉 সবুজ ড্রপিংস
পানির পিএইচডি
কবুতরের যতগুলি রোগ তার বেশিরভাগই পানিবাহিত ব্যাকটেরিয়াল রোগ। যে গুলো সৃষ্টি হয় পানির PH সঠিক না থাকার কারণে। এবং প্রতিবছর সারাদেশের কবুতর পালকরা ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছে এই পানিবাহিত রোগের আক্রমণে। অর্থাৎ পানির PH ঠিক রাখার মেডিসিন গুলো যে যার মত করে আইডিয়া মুলক ব্যবহার করছে। আবার কেউ টোটালি ব্যাবহার করছে না, অথচ তার এলাকার পানির PH লেভেল ঠিক নাই তবুও সে করছে না।
যেমনঃ- হেমিকো PH, রেনা PH, সহ বিভিন্ন কোম্পানির বিভিন্ন নামে যে PH গুলো মার্কেটে পাওয়া যায়। সেটিকে খামারিরা মেডিসিন কোম্পানির নির্দেশনা উপেক্ষা করে শুধু আইডিয়া মুলক ব্যবহার করে যাচ্ছে। কেউ এক লিটারে দুই মিলি। কেউ এক লিটারে এক মিলি। অথচ মেডিসিন কোম্পানির নির্দেশনা দুই থেকে তিন লিটারে এক মিলি। অবাক করা বিষয় হলো মেডিসিন কোম্পানির নির্দেশনা যে সঠিক সেটাও বলা যাবেনা। কারণ বাংলাদেশের একেক জেলার পানির PH লেভেল একেক রকমের। যেসব যায়গায় পানির PH লেভেল ৭ আছ। সেখানে এই PH ব্যাবহারে উপকারের চেয়ে ক্ষতির সম্ভাবনাই বেশি। কারন এগুলো এসিড থেকে তৈরী।
বিষয়টি গভীর ভাবে ভেবে দেখবেন এজন্য জেলাভিত্তিক সংগঠনগুলি থেকে পানি শোধনাগার অফিসের মাধ্যমে। অন্তত একবারের জন্য হলেও ও-ই জেলার পানির PH পরীক্ষা করে নেয়ার পরামর্শ রইল। এতে পুরো জেলার কবুতর পালক উপকৃত হবে। এই কাজটি একটি অ্যাসোসিয়েশনের জন্য খুবই সহজ ব্যাপার।
পানির PH ৭ রাখার জন্য এক লিটারে কতটুক PH দরকার।তা পানির PH লেভেল পরীক্ষা করার পরেই নির্ধারিত হবে, এক লিটারে এক মিলি, না এক লিটারে দুই মিলি। পরীক্ষার পরে এমনও হতে পাড়ে পাচ লিটারেও এক মিলি কিংবা আধা মিলিও দরকার হতে পাড়ে। আবার একে বারেই দরকার নাও হতে পাড়ে। আসলে কবুতর পালকদের কাছে অত্যন্ত জনপ্রিয় ও কার্যকারী এই PH। এটি ব্যবহারে যথেষ্ট সতর্ক থাকা উচিত। কারণ উল্টাপাল্টা হয়ে গেলে উপকারের চেয়ে ক্ষতির সম্ভাবনা অনেক বেশি।
আমি চ্যালেঞ্জ করে বলছি মেডিসিন কোম্পানির নির্দেশনা সঠিক নয় ,এটা আইডিয়া মূলক বিভ্রান্তকর।পাশাপাশি কবুতর পালকদের আইডিয়া নির্ভর ডোজ লেভেল একবারেই সঠিক নয় বরং বিভ্রান্তকর।
আজ এখানেই শেষ করছি আবার দেখা হবে নতুন কোন বিষয় নিয়ে। নতুন এবং প্রয়োজনীয় পোষ্ট গুলো পেতে আমাদের ব্লগটি Follow করুন এবং নিচের কমেন্ট বক্সে আপনার মূল্যবান মতামত দিয়ে আমাদের সংঙ্গে থাকুন।
0 মন্তব্যসমূহ
Thanks for Commenting! please follow our blog and see update continue