১/ কিভাবে নতুন কবুতরকে পোষ মানানো যায়।
২/ কিভাবে পোষ্য কবুতরকে নিজের অনুগত হিসেবে তৈরি করা যায়।
চলুন তাহলে মূল আলোচনায় আসা যাকঃ-
🌼🌼🌼প্রথম আলোচনাঃ- কিভাবে নতুন কবুতরকে পোষ মানানো যায়।
আসলে আমরা সাধারণত যে কবুতর গুলোকে খাঁচায় লালন-পালন করি সেগুলোকে পোষ মানানোর প্রয়োজন হয় না। তখনি কথাটা আসে যখন আমরা নতুন কবুতরকে উন্মুক্ত অবস্থায় লালন-পালন করতে চাই।কেননা কবুতর অনেক দিন পরর্যুন্ত তার পূর্বের বসবাসের স্থান চিনে রাখতে পারে। কখন কখন দেখা যায় কবুতর ঠিকই ডিম- বাচ্চা করছে দীর্ঘদিন পর সে তার আগের স্থানে ফিরে গিয়েছে। মূলত বয়স বাড়ার সাথে সাথে তাই বাসস্থান চেনার স্মৃতিশক্তি বৃদ্ধি পেয়ে থাকে। একারনে বাইরে থেকে আনা কবুতরে নিজ বাসস্থানে পোষ মানানোর জন্য কম বয়সি কবুতর নির্বাচন করাই উত্তম। নতুন কবুতরকে নিজের ঘরে পোষ মানানোর জন্য নিন্মলিখিত পদ্ধতি গুলো অনুসরণ করা যেতে পারে। পদ্ধতির গুলোর বৈজ্ঞানিক কোন ব্যাখ্যা আছে কিনা আমার জানানেই তবে এই পদ্ধতি গুলো হাজার বছর ধরে কবুতর পালনের ক্ষেত্রে প্রয়োগ হয়ে আসছে।
🌼পদ্ধতি ১,পাখনা বেঁধে বাসস্থান চেনানো/পোষ মানানোঃ-- বাইরে থেকে আনা কবুতরকে তার দুইটি পাখনার থেকে প্রথম ৫/৬ টি পালক ভালো করে বেঁধে দিতে হবে। এক্ষেত্রে পালকের মাঝামাঝি বেঁধে দেয়া উত্তম। এতে কবুতর বাঁধা অবস্থায় উড়বার ক্ষমতা হারাবে, ফলে সে চাইলেউ পূর্বের বাসস্থানে ফিরে যেতে পারবে না। এখন আপনি কবুতরকে যে ঘরে রাখতে চান বা অন্য কবুতর যে ঘরে থাকে সেখনে একটি রুমে/খোপে ৩/৪ দিন আটকে রাখুন পাশাপাশি সেখানে পর্যাপ্ত খাবার এবং পানির ব্যাবস্থা রাখুন। এভাবে ২/৩ দিন পর তার পাখনার বাঁধন খুলে দিয়ে ৩/৪ টি পালক নতুন করে বেঁধে দিন। এতে সে উড়তে পারবে তবে ৫০/১০০ গজ এর বেশি যেতে পারবে না। এবার ঘরে খাবার না দিয়ে বাসার থেকে একটু দুরে খাবার এবং পানি পরিবেশন করুন।এভাবে ১০/১৫ দিন পর যখন দেখবেন সে নিজে থেকে ঘরে প্রবেশ করছে এবং খাবার উদ্দেশ্যে ঘর থেকে বের হচ্ছে তখন অন্য পাখার বাঁধনটিও খুলে দিন। কবুতর আর আপনার বাসা থেকে চলে যাবার সম্ভাবনা নেই বল্লেই চলে।
বিঃদ্রঃ বয়স্ক কবুতর হলে অন্য কবুতরের সাথে জোড়া নিয়ে ডিম-বাচ্চা করা পর্যন্ত তার বাকি পাখনার বাঁধন না খুলে দেয়াই উত্তম। এ ক্ষেত্রে ১/২ বার ডিম-বাচ্চা করলে আশা করা যায় সে আর বাসা থেকে যাবে না।
🌼পদ্ধতি ২, পাখনা কেটে বাসস্থান চেনানো/পোষ মানানোঃ-- পোষ মানানোর জন্য এ পদ্ধতিটিও অনেক পুরাতন এবং কার্যকারী পদ্ধতি। এ পদ্ধতিতে কবুতরের পাখনার প্রথম ১০ টি ফ্লাইটের প্রথম ৩টি পালক রেখে বাকি ৭ টি পালক কেটে ফেলা হয়, ফলে কবুতর স্বাভাবিক উড়ার ক্ষমতা হরায়। সবথেকে ভালো হয় পাখনা কাটার পর আপনি কবুতরকে যে ঘরে রাখতে চান বা অন্য কবুতর যে ঘরে থাকে সেখনে একটি রুমে/খোপে ২/৩ দিন আটকে রেখে পাশাপাশি সেখানে পর্যাপ্ত খাবার এবং পানির ব্যাবস্থা করে দেওয়া। এভাবে ২/৩ দিন পর ছেড়ে দিয়ে তার বাসস্থানের কাছেই খাবার এবং পানির ব্যবস্থা করে দিন।এভাবে তার পাখনা গুলো আবার উঠতে উঠতে সে সুন্দর ভাবে ঘর চিনে যাবে।
দুইটি পদ্ধতির মধ্যে ২য় পদ্ধতিটি অনেক বেশি কার্যকারী একটি পদ্ধতি। এছাড়াও নতুন কবুতর আনলে তাকে পর্যাপ্ত সময় দিন তাহলে সে সহজেই পোষ মেনে যাবে।
🌼🌼🌼দ্বিতীয় আলোচনাঃ- কিভাবে পোষ্য কবুতরকে নিজের অনুগত হিসেবে তৈরি করা যায়।
পদ্ধতি- ১ঃ-বাচ্চা বয়সের কবুতরকে অনুগত হিসেবে তৈরি করাঃ- এ পদ্ধতিটি অনেক পুরাতন এবং কার্যকর পদ্ধতি। এ পদ্ধতিতে অল্প বয়সের অর্থাৎ ১৮/২১ দিন বয়সের বাচ্চা কবুতর কে নির্বাচন করা হয়ে থাকে।মুলত এ পদ্ধতিতে কবুতরকে প্রচুর সময় দেবার প্রয়োজন পরে।যদিও কাজটি খুব বেশি কঠিন নয়। অনেকেই সখের বশে এই কাজটি করে। এ পদ্ধতিতে কবুতরের বাচ্চার বয়স ১৮/২১ দিন সময় থেকে বা তারও কম সময় থেকে তাকে হাতে খাওয়ানো,মুখের মধ্যে খাবার রেখে খাওয়ানো,সংঙ্গে করে ঘুরাঘুরি করা,দুরের থেকে ডেকে কাছে আনা, সহ বিভিন্ন কসরত রপ্ত করানো হয়ে থাকে। পদ্ধতিটি সহজ হলেউ মুলত এই পদ্ধতির সফলতা নির্ভর করে আপনি কবুতরকে কতটা সময় দিবেন তার উপর।
পদ্ধতি-২ঃ- বয়স্ক কবুতরকে অনুগত হিসেবে তৈরি করাঃ- যদিও কাজটি কঠিন এবং সফলতার হার অনেক কম। তবুও অনেক কবুতর পালককে এটি করতে দেখা যায়।এ পদ্ধতিতে কবুতরকে নিজের অনুগত হিসেবে তৈরি করতে হলে। বেশ কিছু পদ্ধতি অবলম্বন করতে হবে। প্রথমত কবুতরের ভয় দুর করতে হবে এর জন্য আস্তে আস্তে তাকে কাছে আনার অভ্যাস তৈরি করতে হবে। এর পর তাকে হাতে খাবার খাওয়ার অভ্যাস তৈরির জন্য তার সমনে কোন লাঠির মাথায় ছোট হাতের মত পাত্র বেধে তাতে খাবার রেখে খাওয়াতে হবে। এভাবে প্রতি দিন কবুতর এবং পালকের দুরত্ব কমিয়ে একটা সময় হাতে খাবার রেখে তার সামনে উপস্থাপন করতে হবে। এভাবে কিছুদিন এর মধ্যে তার হাতে খাবার অভ্যাস তৈরি হয়ে যাবে। তবে তাকে নিয়ে ঘুরাঘুরি করা, নিজের কাছে ডাকা,নিজের আদেশ পালন করা ইত্যাদি পদ্ধতি ১ সবথেকে সহজ। কেননা কবুতরের বয়স বেশি হলে এই কাজ গুলো করা কঠিন হয়ে পরে।তবে কেউ কেউ একটি পদ্ধতি অবলম্বন করে সফলো হয়েছে। এক্ষেত্রে কবুতরের পাখনার প্রথম ১০ টি ফ্লাইটের প্রথম ৩টি পালক রেখে বাকি ৭ টি পালক কেটে ফেলা হয় বা কিছু পালক বেঁধে রাখ হয়। ফলে কবুতর স্বাভাবিক উড়ার ক্ষমতা হরায় তখন কবুতরকে প্রচুর সময় দেবার প্রয়োজন পরে। যেহেতু সে তার পাখনা বাঁধা থাকায় উড়তে পারে না সেহেতু তাকে কাঁধে/হাতে নিয়ে ঘুরাঘুরি করা,হাতে ধরে খাওয়ানো,একটু দুরে রেখে কাছে ডাকা, ইত্যাদি সহজ হয়ে যায়। এভাবে কিছুদিনেই তার সাথে বন্ধুত্ব জমে ওঠে এবং সে অনুগত হিসেবে তৈরি হয়ে যায়।
পদ্ধতি গুলো আমারা অভিজ্ঞতা থেকে শেয়ার করেছি, মূলত এগুলোর কোন বৈজ্ঞানিক ভিত্তি বা পদ্ধতি নেই।আপনাদের নিজস্ব অভিজ্ঞতায় আর কোন পদ্ধতি থাকলে কমেন্ট বক্সে জানানোর অনুরোধ রইলো।
আপনি আরও পড়তে পারেন:
কবুতরের ঠান্ডা জনিত সমস্যা চিকিৎসায় প্রাকৃতিক উপাদানের ব্যবহার।
অসুস্থ কবুতরের চিকিৎসায় প্রতিকারের পাশাপাশি প্রতিরোধ ব্যবস্থাপনার গুরুত্ব এবং পরবর্তী পদক্ষেপ।
কবুতরের ব্রিডিং বিরতি বা রেষ্ট কেন দিবেন ? ব্রিডিং বিরতি বা রেষ্ট এর প্রয়োজনিয়তা।
আজ এখানেই শেষ করছি আবার দেখা হবে নতুন কোন বিষয় নিয়ে। নতুন এবং প্রয়োজনীয় পোষ্ট গুলো পেতে আমাদের ব্লগটি Follow করুন এবং নিচের কমেন্ট বক্সে আপনার মূল্যবান মতামত দিয়ে আমাদের সংঙ্গে থাকুন।
0 মন্তব্যসমূহ
Thanks for Commenting! please follow our blog and see update continue