Ticker

10/খামার ব্যবস্থাপনা/ticker-posts

কবুতরের রোগের বিভিন্ন লক্ষণ অনুযায়ী প্রাকৃতিক উপায়ে চিকিৎসা।


এক এক প্রজাতির কবুতরের মধ্যে ইমিউনিটি ক্ষমতা এক এক রকম। ফেন্সি কবুতরের তুলনায় গোল্লা, রেসার বা গিরিবাজ কবুতরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা অনেক বেশী হয়ে থাকে। তাই একজন গিরিবাজ পালক তার কবুতরের চিকিৎসায় অনেক সময় হোমিও বা বোনাজি ঔষধ ব্যবহার করে বেশির ভাগ সময় ১০০% রেজাল্ট পেয়ে থাকেন। অপরদিকে একই ক্ষেত্রে একজন ফেন্সি কবুতর পালক উক্ত ফলাফল পেতে বিলম্ব করেন। এসব ক্ষেত্রে একটি বিষয় মাথায় রাখতে হবে সেটি হলো অসুস্থ কবুতরটি কোন ধরনের স্টেপে রয়েছে। এটি জেনেই আপনাকে দ্রুত সিদ্ধান্ত নিতে হবে, যদি আপনার কবুতরটি সর্বশেষ স্টেপে অবস্থান করে এবং  আপনি হারবাল বা হোমিওপ্যাথি চিকিৎসা দিয়ে থাকেন সেক্ষেত্রে আপনার ফলাফল বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই জিরো আসবে। কেননা কিছু রোগ রয়েছে যা আপনাকে চিকিৎসার জন্য সময়ই দিবে না, আপনি বুঝে ওঠার পূর্বেই সব শেষ করে দিবে। যেমন -সাধারণ ঠান্ডা, বদহজম, অপুষ্টি ও বিপাকীয় রোগ,ক্যাংকার,পক্স আপনাকে যতটা সময় দিবে অপর দিকে সালমোনিল্লাহ্, এডিনো ভাইরাস, সিকরো ভাইরাস, ডাইরিয়া আপনাকে ওগুলোর ২০% সময়ও দিবে না।  সুতরাং কবুতরের চিকিৎসা দেবার ক্ষেত্রে উক্ত রোগের ধরন ও গভীরতা জেনে কবুতরের চিকিৎসা দিন। অপর দিকে আরও একটি কথা না বললেই নয়, সেটি হলো কবুতরের রোগবালাই এর প্রতিরোধ ও প্রতিকার এই দুইটার মধ্যে প্রাকৃতিক উপাদান প্রতিরোধের ক্ষেত্রে ব্যবহার অনেক কার্যকারী ভুমিকা রাখে। তবে বিশেষ কিছু রোগ প্রতিকারের ক্ষেত্রেউ প্রাকৃতিক উপাদান অনেক কার্যকরী ভূমিকা রাখে। যেমনঃ- ঠান্ডা জনিত সমস্যা, ক্যাংকার, পক্স, ডাইরিয়া ইত্যাদি।তবে কবুতর অসুস্থ হলে অসুস্থতার ধরন ও সময় বুঝে আপনাকে চিকিৎসা পদ্ধতি অনুসরণ করতে হবে। 

আমরা আপনাদের সুবিধার কথা মাথায় রেখে কবুতরের চিকিৎসা পদ্ধতিকে ২ টি ভাগে ভাগ করেছি।

⏩ক) প্রচলিত ওষুধের মাধ্যমে কবুতরের বিভিন্ন লক্ষণ অনুযায়ী প্রাথমিক চিকিৎসা। 
⏩খ)প্রাকৃতিক উপাদানের মাধ্যমে কবুতরের বিভিন্ন লক্ষণ অনুযায়ী প্রাথমিক চিকিৎসা।


বিভিন্ন লক্ষণ অনুযায়ী প্রাকৃতিক উপায়ে চিকিৎসা।  

✳১।সবুজ পায়খানা / চুনা পায়খানা/ আমাশয়ঃ-  থানকুনি পাতার রস ৫ এম.এল করে দিনে দুই বার। সাথে ৫ ফোঁটা আদার রস খাওয়ান ৩ থেকে ৪ দিন ইনশাআল্লাহ ঠিক হয়ে যাবে।


✳২।সবুজ পায়খানার সাথে চুনা পায়খানাঃ- থানকুনি পাতার রস ৫ এম.এল করে দিনে দুই বার। সাথে ৫ ফোঁটা আদার রস খাওয়ান ৩ থেকে ৪ দিন ইনশাআল্লাহ ঠিক হয়ে যাবে।

✳৩।ঠান্ডা/কাশি/জ্বরঃ- ঠান্ডা বা কাশি হলে, তুলসিপাতা রস বানিয়ে ২ সিসি করে দিনে ২ থেকে ৩ বার কবুতরকে খাইয়ে দিন ইনশাআল্লাহ ঠিক হয়ে যাবে।পাশাপাশি সামান্য পরিমাণ আদা কুঁচি কুঁচি করে কেটে ১ লিটার পানিতে ফুটিয়ে,পানির কালার যখন পরিবর্তন হবে তখন তা চুলা থেকে নামিয়ে ঠান্ডা করে তাতে ১ টেবিল চামচ মধু মিশিয়ে কবুতরকে ১০ সিসি পরিমাণ খাইয়ে দিন এভাবে ৪ থেকে ৫ দিন খাওয়াতে হবে। ইনশাআল্লাহ ঠিক হয়ে যাবে।


✳৪।হটাৎ বমি করলে বা বদহজম হলেঃ-  ৫ থেকে ১০ ফোটা আদার রস দিনে ৩ বার  খাওয়ান আসা করি ঠিক হয়ে যাবে।


✳৫। হিট স্ট্রোকঃ-Alovera এর একটি পাতার জেল বা Apple Sidar Vinegar থেকে ১ এম এল পরিমান এক লিটার পানিতে মিশিয়ে ১০ এম এল করে দিনে দুই বার খাইয়ে দেন। অথবা মাসে ৪ থেকে ৫ দিন এটি প্রয়োগ করুন। এবং কবুতর কে যত দ্রুত সম্ভব গোছল করিয়ে দিন।


✳৬।ডিম না জমলে/ ডিম দেয়া বন্ধ করে দিলেঃ- ১০ থেকে ১৫ টি ছোলা রাতে ভিজিয়ে রেখে সকালে খালি পেটে হাতে ধরে খাইয়ে দিন এভাবে ৫ থেকে ৭ দিন খাওয়াতে হবে। এটার পাশাপাশি সজিনাপাতার রস করে ৫ এম এল পরিমান দিনে এক বার দিন। ও খাবার পানিতে এক টেবিল চামচ  টক দই নিয়ে ১ লিটার পানিতে মিশিয়ে খাওয়ান। ইনশাআল্লাহ ঠিক হয়ে যাবে।


✳৭।প্যারালাইসিসঃ- ১০ থেকে ১৫ টি ছোলা রাতে ভিজিয়ে রেখে সকালে খালি পেটে হাতে ধরে খাইয়ে দিন এভাবে ১০ দিন খাওয়াতে হবে।


✳৮। ডিমের ভেতর বাচ্চা মারা যাওয়াঃ- সজিনাপাতার রস করে ৫ এম এল পরিমান দিনে এক বার দিন। ও খাবার পানিতে এক টেবিল চামচ  টক দই নিয়ে ১ লিটার পানিতে মিশিয়ে খাওয়ান।  ইনশাআল্লাহ ঠিক হয়ে যাবে।


✳৯।ক্ষতের সৃষ্টি হলে বা বাচ্চার নাভির ইনফেকশনঃ- সামান্য পরিমাণ হলুদের গুরা নিন, তাতে  সামান্য পরিমাণ সরিষার তেল মিশিয়ে পেষ্ট তৈরি করুন, পেষ্টটি যেন একটু নরম হয়৷ এবার কবুতরের যে জায়গাতে ক্ষতের সৃষ্টি হয়েছে ওখানে দিনে দুই বার পেষ্টটি ভালোভাবে লাগিয়ে দিন।

পাশাপাশি ৫/৬ ফোটা রসুনের রস হাতে ধরে খাওয়ান।ইনশাআল্লাহ এভাবে ৩ থেকে ৪ দিনে ক্ষত সেরে উঠবে।


✳১০।পালক ফুলানোঃ- তিন থেকে চার টুকরা রসুন থেঁতলে ১ লিটার পানিতে মিশিয়ে ৫ থেকে ১০ সিসি পরিমাণ খাওয়াতে হবে।সঙ্গে  ভিটামিন ও মিনারেল সমৃদ্ধ খাবার এবং উন্নত গ্রীড নিয়মিত কবুতরগুলো প্রদান করা।


✳১২।কবুতরের পেটে গ্যাস হলেঃ- আদার রস করে দিনে তিন বার ১০ ফোঁটা করে কবুতরকে খাইয়ে দিন। পাশাপাশি খাবারের সাথে দারুচিনি গুরা মিশিয়ে খাওয়ান।

✳১৩।পা বা পাখা ভেঙে যাওয়াঃ- এটির চিকিৎসায় হাড়জোড়া বা অস্তিসংহার হাড় ভাঙ্গায় অত্যন্ত কার্যকরি । এর ডাঁটা ও পাতা সমপরিমাণ রসুন ও গুগগুলু একসঙ্গে বেটে গরম করে ভাঙ্গাস্থানে প্রলেপ দিলে জুড়ে যাবে। প্রলেপটি ২/১ দিন পরপর পরিবর্তন করে লাগাতে হবে। এগুলো বিভিন্ন বানতির দোকানে পাবেন। এবং ব্যাথা উপশমের জন্য  মাঝারো আকারের এক কোষ রসুনের তিন ভাগের এক ভাগ দিনে দুই বার খাওয়াতে হবে।সঙ্গে খাবারের সাথে সামান্য পরিমাণ কালোজিরা মিশিয়ে দিন।


✳১৪।চোখের সংক্রমণ হলে/চোখ ওটাঃ- কবুতরের চোখে ১ ফোটা তুলসি পাতার রস দিন এবং ৫ এম এল পরিমান রস কবুতরকে খাইয়ে দিন।এভাবে দিনে দুই বার খাওয়াতে হবে এবং দিনে তিন বার চোখে দিন।ভালো না হওয়া পর্যন্ত।


✳১৫। কবুতর টাল হলেঃ- ৮ থেকে ১০ টি ছোলা রাতে ভিজিয়ে রেখে সকালে খালি পেটে কবুতরকে হাতে ধরে ২১ দিন পর্যুন্ত ধর্য্য ধরে খাওয়াবেন। এর পাশাপাশি প্রথম ৩দিন ( লেবু+লবন+চিনি ) এর দ্রবণ খাওয়ান। এর পর একদিন গ্যাপ দিয়ে (রসুনের দ্রবণ) তিন দিন খাওয়াতে হবে। পাশাপাশি  ভিটামিন  ও মিনারেল সমৃদ্ধ খাবার প্রদান করুন।এবং খাবারের সাথে দারুচিনির গুরা এবং কিছু পরিমান কালোজিরা মিশিয়ে দিন।


✳১৬। অরুচি বা খুদামন্দঃ-ভালো মানের গ্রিড এবং সুষম খাবার বন্টন করতে হবে। সংঙ্গে মাসে কমপক্ষে ৩ দিন রসুন পানি, ৩ দিন লেবু,লবন,চিনির মিশ্রণ, ৩ দিন এ্যাপেলসিডার ভিনেগার এবং  সংঙ্গে খাবারের সাথে দারুচিনি গুরা মিশিয়ে খাওয়াতে হবে।



আজ এখানেই শেষ করছি আবার দেখা হবে নতুন কোন বিষয় নিয়ে।আসা করি সাথেই থাকবেন। নতুন এবং প্রয়োজনীয় পোষ্ট গুলো পেতে আমাদের ব্লগটি Follow  করুন এবং নিচের কমেন্ট বক্সে আপনার মূল্যবান  মতামত দিয়ে আমাদের সংঙ্গে থাকুন। এছাড়াও কোথাও কোন ভুলহলে ক্ষমাসুন্দর দৃৃষ্টিতে দেখার অনুুরোধ রইলো।
আপনাদের ভালোবাসাই আমদের আগামীর পথ চলার পাথেয় ।

আপনাদের সকলের শারীরিক সুস্থতা   ও সকলের কবুতর গুলোর সুস্থতা কমনা করে শেষ করছি। আবার দেখা হবে নতুন কোন বিষয় নিয়ে।সবাই ভালো থাকবেন।

আল্লাহ হাফেজ

তথ্য সংগ্রহেঃ- 
জাকারিয়া হাসান এমরান
Admin
Pigeon Healthcare In BD
#pigeon #কবুতর #feralrockdove
 *******Thank You *******


একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ