Ticker

10/খামার ব্যবস্থাপনা/ticker-posts

কবুতরের ডিম সংগ্রহ ও সংরক্ষণ কিভাবে করবেন?।

কবুতর পালনে সফলতার ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ একটি বিষয় ব্রিডিং অর্থাৎ বাচ্চা উৎপাদন। সুস্থ সবল বাচ্চা উৎপাদনের জন্য অনেক গুলো গুরুত্বপূর্ণ বিষয় অন্তর্ভুক্ত। এর মধ্যে ডিম সংরক্ষণের বিষয় একটি। কেননা কবুতরের প্রতিবারে ২ টি ডিম দিয়ে থাকে কিন্তু কথা হচ্ছে এই দুইটি ডিম পারার মধ্যে প্রায় ২ দিন বা ৪৮ ঘন্টার ব্যবধান থাকে। এ কারনে যখন কবুতর প্রথম ডিমটি পারে তখন ডিমটি সরিয়ে রাখার প্রয়োজন পরে এবং পরবর্তী ডিমটির অপেক্ষা করতে হয়। এ কারনে প্রথম ডিমটি দ্বিতীয় ডিম দেয়া অবধি সংরক্ষণের প্রয়োজন পরে।এটি করা হয় যাতে দুইটি ডিম একসাথে ফুটতে পারে এবং দুইটি বাচ্চা সমান যত্ন পায়। এছাড়াও আরও একটি কারনে ডিম সংরক্ষণের প্রয়োজন পরে সেটি হলো কিছু কবুতর রয়েছে যারা তাদের ডিম সফল ভাবে ফুটাতে বা বাচ্চা লালন পালন করতে পারে না। তাদের মধ্যে কিং, স্ট্রেচার,পোটার,বেনিসব ইত্যাদি অন্যতম। বিশেষ করে যে সকল প্রজাতির কবুতর শুধু মাত্র মাংস উৎপাদন এর জন্য প্রজনন করা হয়।কেননা এরা শারীরিক ভাবে আকারে বড় হয়ে থাকে যার কারনে বেশির ভাগ প্রজাতি বাচ্চা প্রতিপালন করতে সক্ষম নয়। আর এ কারনে এদের ডিম গুলো অন্য কবুতরের কাছে বাচ্চা উৎপাদন ও প্রতিপালনের জন্য দেয়া হয়। সে সকল কবুতরকে প্রতিপালক হিসেবে ব্যবহার করা হয় এদেরকে ফোস্টার কবুতর বলে। এই কাজটি করার জন্য ডিম সংরক্ষণ গুরুত্বপূর্ণ ভুমিকা পালন করে। ডিম সংরক্ষণের ক্ষেত্রে কিছু ধাপ রয়েছে এবং প্রতিটি ধাপই সম্পূর্ণ করার ক্ষেত্রে বিশেষ সর্তকতার প্রয়োজন পরে।

ডিম সংরক্ষণের ক্ষেত্রে প্রথমে যে বিষয়টি আসে সেটি হলো ডিম সংগ্রহ করা। ডিম সংগ্রহ করার জন্য যে সকল বিষয় মাথায় রাখা প্রয়োজন।

১। কবুতরের নিকট থেকে ডিম সংগ্রহের সময় যদি কবুতর ডিম নিয়ে বসে থাকে তাহলে হাতের তালু দিয়ে ডিম ধরতে হবে।অর্থ্যাৎ হাতের তালু নিচের দিকে থাকবে এবং এভাবে হাত কবুতরের পেটের নিজ থেকে ডিম নিরাপদে বের করে আনতে হবে।  যাতে কবুতরের পাখার ঝাপটায় বা ঠোঁটের আঘাতে ডিমের কোন  ক্ষতি সাধন না হয় বা বেশী তাড়াহুড়ো না হয় এতে কবুতর ভয় পেয়ে লাফ দিতে পারে আর তাতে কবুতরের পায়ে লেগে বাটি থেকে ডিম পরে গিয়ে ফেটে যেতে পারে।

২। প্রথম ডিমটি সংগ্রহের সময় অবশ্যই কবুতের হাড়িতে একটি প্লাস্টিকের ডিম বা ফলস্ ডিম রাখতে হবে। এবং ডিমটি সংরক্ষণের ব্যবস্হা করতে হবে।

৩। এবার দ্বিতীয় ডিমের জন্য ৪৫ থেকে ৪৮ ঘন্টা অপেক্ষা করা। দ্বিতীয় ডিমটি দেবার পর। যদি উক্ত কবুতরের মাধ্যমে ডিম ফোটাতে হয় তবে ফলস্ ডিমটি সরিয়ে সংরক্ষণ করা ১ ডিমটি দিতে এবে এক্ষেত্রে সব থেকে ভালো ফলাফল আসবে যদি দ্বিতীয় ডিমটি প্রথম ডিমের মত ফলস্ ডিম দিয়ে সরিয়ে এনে ১ থেকে ২ ঘন্টা পর দুইটি ডিম একই আদ্রতায় এলে প্লাস্টিকের ডিম সরিয়ে দুইটি ডিম একসাথে দেয়া।  এতে দুইটি ডিম একই আদ্রতায় আসবে এবং একসাথে তাপ পেতে শুরু করবে ফলে বাচ্চা একই সাথে ফুটবে এবং বড় হবে।

৪। ডিম হস্তান্তরের সময় তারা হুরা করা যাবে না।

৫। ডিম খুব সাবধানে হস্তান্তর করতে হবে যাতে কোন ভাবেই ডিম ঝাকি না খায়।


ডিম সংগ্রহ করার পর গুরুত্বপূর্ণ বিষয়টি হলো যথাযথ নিয়মে সংরক্ষণ। ডিম সংরক্ষণের ক্ষেত্রে কিছু বিষয় মাথায় রাখা জরুরি তা না হলে ডিম ফোঁটার সম্ভাবনা বাধা গ্রস্ত হতে পারে। চলুন দেখে নেই ডিম সঠিক ভাবে সংরক্ষণের করণীয় সমূহ।

১।ডিম সংগ্রহের পর অবশ্যই সেটি নরম জায়গায় রাখতে হবে যেন ডিমের গায়ে কোন প্রকার ক্ষতি সাধন না হয়।

২। ডিমের সরু আংশ নিচের দিকে রেখে সংরক্ষণ করতে হয়। তবে যদি ৭ দিনের বেশি ডিম সংরক্ষণের প্রয়োজন পরে তাহলে ডিমের সরু অংশ উপরে রাখতে হবে।

৩। সুস্থ বাচ্চা উৎপাদনের জন্য ডিম সংরক্ষণের সময় ডিম জীবানু মুক্ত করা জরুরী। এক্ষেত্রে জীবাণুনাশক পানিতে গুলিয়ে একটা সুতি কাপর ভিজিয়ে ডিম মুছে দিতে হবে।

৪। ডিম সংরক্ষণের ক্ষেত্রে সবচেয়ে উত্তম সময় হলে  ২-৩ দিন। তবে সঠিক পর্যবেক্ষনের মাধ্যমে ১০ থেকে ২ সপ্তাহ পযন্ত রাখা যেতে পারে। তবে কবুতরের ডিম ১ সপ্তাহের  বেশী রাখা ঠিক নয়। এতে ডিম ফোঁটার সম্ভাবনা বাধা গ্রস্ত হতে পারে।

৫। ডিম গুলো ১০-২০ ডিগ্রী সেলসিয়াস বা  (৫০– ৬০ ফারেনহাইট )
তাপমাত্রায় এবং 75 থেকে ৮০% আদ্রতায় সংরক্ষণ করতে হবে।

৬। ২ দিনের বেশি ডিম সংরক্ষণের ক্ষেত্রে দিনে কম পক্ষে ২ বার ডিমটি ৩৫°-৪৫° ঘুরিয়ে দেওয়া উচিৎ। সেটা ঘুড়ে ৯০° তে পৌছাবে।


৭। ৫ দিনের কম সময় ডিম সংরক্ষণের ক্ষেত্রে  ডিমগুলি ১৫.৬ ডিগ্রি সেন্টিগ্রেড থেকে ১৭.২° ডিগ্রি সেন্টিগ্রেড (৬০ - ৬৫º ফারেনহাইট ) তাপমাত্রায় এ সংরক্ষণ করা উচিৎ।

৮। ৫ দিন বা তার বেশি সময় ধরে ডিম সংরক্ষণের ক্ষেত্রে ১০.৬° ডিগ্রি সেন্টিগ্রেড  বা ৫১° ফারেনহাইট তাপমাত্রায় ডিম সংরক্ষণ করা জরুরি।

৯। ডিমগুলিকে উল্টো দিকে ঘুরিয়ে দেয় যাবে না , বরং সাবধানতার সাথে এগুলি পাশ থেকে পাশের দিকে কাত করুন ৩৫°-৪৫° ডিগ্রি এ্যাংগেলে ঘুরিয়ে দিন।


ডিম সংরক্ষণের ক্ষেত্রে একটি বিষয় মাথায় রাখা জরুরি সেটি হলো যত দ্রুত সম্ভব ডিম ফোটানোর জন্য কবুতরের কাছে হস্তান্তর করা। এক্ষেত্রে ফোস্টারিং এর জন্য একজন খামারিকে অবশ্যই খেয়াল রাখতে হবে যেন ফোস্টার বা প্রতিপালক পিতামাতা আসল ডিম পারা কবুতর জোড়ার ডিম পাড়ার সময়ের পার্থক্য যেন ৩ দিনের বেশী না হয়। এর কারন হল যে ফোস্টার পিতামাতা কে তার আগন্তক বা বাচ্চা উৎপাদনের এর জন্য তৈরি হতে হয়। যদি এই সময়ের মধ্যে সময়ের ব্যাবধান কম বা বেশী হয় তাহলে ফোস্টার জোড়া পর্যাপ্ত কর্প মিল্ক তৈরি হয় না ফলে বাচ্চার বৃদ্ধি ব্যাহত হয় বা বাচ্চা মারা যেতে পারে। আর যদি দেরিও হয় তাহলে ফস্টার জোড়া হয়ত ভাবতে পারে এটা অনুরবর ডিম তাই তারা ডিম কে পরিত্যাক্ত ঘোষণা করতে পারে।সুতরাং ডিম সংরক্ষণ ও ডিম ফোটানোর মধ্যে অধিক সময়ের ব্যাবধান বাচ্চা উৎপাদনে ব্যাপক প্রভাব ফেলতে পারে। এই বিষয়টি একজন খামারিকে গুরুত্ব সহকারে দেখতে হবে।



ডিম সঠিক নিয়মে সংরক্ষণ না করলে কি হয়?
১। ডিম ফোঁটার রেট কমে যায়।
২। বাচ্চার কোয়ালিটি খারাপ হয়।
৩। বাচ্চার গ্রোথ বাঁধাপ্রাপ্ত হয়।
৪। ডিম ফোঁটার পূর্বে ও পরে মৃত্যুর হার বেড়ে যায়।
৫। সাত দিনের বেশী ডিম সংরক্ষণ করলে ডিম ফোঁটার রেট মারাত্মক ভাবে কমে যেতে পারে।
৬। অধিকাংশ ডিম তার উর্বরতা হারায়।


কবুতর পালনে সফলতার জন্য  যথাযথ ভাবে ডিম সংগ্রহ ও সংরক্ষণ একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। সুতরাং উক্ত বিষয়টি যথাযথ ভাবে সম্পূর্ণ করা একজন খামারির সফলতার চাবিকাঠি।

আজ এখানেই শেষ করছি আবার দেখা হবে নতুন কোন বিষয় নিয়ে।আসা করি সাথেই থাকবেন। নতুন এবং প্রয়োজনীয় পোষ্ট গুলো পেতে আমাদের ব্লগটি Follow  করুন এবং নিচের কমেন্ট বক্সে আপনার মূল্যবান  মতামত দিয়ে আমাদের সংঙ্গে থাকুন। এছাড়াও কোথাও কোন ভুলহলে ক্ষমাসুন্দর দৃৃষ্টিতে দেখার অনুুরোধ রইলো।
আপনাদের ভালোবাসাই আমদের আগামীর পথ চলার পাথেয় ।

আপনাদের সকলের শারীরিক সুস্থতা   ও সকলের কবুতর গুলোর সুস্থতা কমনা করে শেষ করছি। আবার দেখা হবে নতুন কোন বিষয় নিয়ে।সবাই ভালো থাকবেন।

আল্লাহ হাফেজ

তথ্য সংগ্রহে এবং লেখকঃ-
জাকারিয়া হাসান এমরান
Admin
Pigeon Healthcare In BD

 *******Thank You *******




একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ