Ticker

10/খামার ব্যবস্থাপনা/ticker-posts

কবুতরের নর ও মাদি কিভাবে চিনবো??




পৃথিবীতে কবুতর পালন হয়ে আসছে বহু যুগ ধরে। পৃথিবীর সমস্ত কবুতরের উৎপত্তি বা পূর্ব পুরুষ হিসাবে বন্য কবুতরকে ধরা হয়। যুগের পর যুগ ধরে কবুতর পালনের পালনের ধারাবাহিকতায় এসেছে পরিবর্তন জাতের মধ্যে এসেছে ১০০০ এর ও বেশি পরিবর্তন। এই পরিবর্তনের ধারাবাহিকতায় কবুতর পালনের মাধ্যেউ এসেছে পরিবর্তন যেমনঃ- একটা সময়ে দেখা যায় শুধুমাত্র শখের বশেই কবুতর পালন করা হলেউ বহুবছর ধরে এটি বানিজ্যিক ভাবেউ প্রতিপালিত হয়ে আসছে।

আমাদের দেশেউ অসংখ্য কবুতর পালক রয়েছেন যারা শুধু শখের বশে বা বানিজ্যিক দৃষ্টি ভঙ্গি নিয়ে কবুতর পালন করেন। তবে অতি দুঃখের সাথে বলতে হয় আমাদের মধ্যে অধিকাংশ কবুতর পালক আছেন যায়া কবুতর পালন করতে গেলে যে সকল প্রাথমিক তথ্য গুলো জানা প্রয়োজন তা জানি না। যদিও কবুতর বিষয়ক অনেক ফেসবুক গ্রুপের বদৌলতে এই অবস্থা থেকে আমরা অনেকটাই  বেরিয়ে আসতে সক্ষম হয়েছি।

আজ আমি আপনাদের সাথে কবুতর পালনের একটি বেসিক বিষয় নিয়ে আলোচনা করবো যেটি প্রতিটি কবুতর পালকের জন্য জানা জরুরী। আর তা হলো কবুতরের নর এবং মাদিকে কিভাবে সনাক্ত করা যায় বা চেনা যায়।বিষয় টি প্রাথমিক অবস্থায় কঠিন হলেউ চেষ্টা করবো সুন্দর ভাবে বিষয় টি উপস্থাপন করার। আসা করি সম্পূর্ণ লিখাটি মনোযোগ সহকারে পড়ার পর আপনিও নর মাদি আলাদা করতে সক্ষম হবেন। আমরা ইতিপূর্বেই জেনে এসেছি যে পুরুষ কবুতরকে (নর) এবং মেয়ে বা স্ত্রী কবুতরকে মাদি বলা হয়ে থাকে।

নর এবং মাদি  কবুতরের মধ্যে বেশ কিছু  শারীরিক এবং স্বভাবগত বৈশিষ্ট্য ও পার্থক্য রয়েছে। যেটি সনাক্ত করার পর আমরা কবুতরের নর এবং মাদিকে আলাদ করতে সক্ষম হবো। আমরা এখানে কবুতরে শারীরিক এবং স্বভাবগত বৈশিষ্ট্য কে দুইটি আলাদা ভাগে ভাগ করে আলোচনা করবো।

ক)শারীরিক বৈশিষ্ট্যগত পার্থক্যঃ-

১/ নর বা পুরুষ কবুতরের মাথা, ঘাড় এবং দেহ তুলনামূলক মোটাসোটা ও লম্বা এবং দৃঢ় হয়।অপরদিকে মাদি বা স্ত্রী কবুতরটির মাথা ও ঘাড় দেহর কাছাকাছি অবস্থান করে এবং নর এর তুলনায় ক্ষীণ বা ছোট হয়।

২/ পুরুষ বা নর কবুতরের গলার রগ মোটা হয়।
অপরদিকে  স্ত্রী বা মাদি কবুতরের গলার রগ তুলনা মূলক ভাবে একটু চিকন হয়।

৩/ বেশির ভাগ ক্ষেত্রে পুরুষ বা নর কবুতর আকারে বড় হয়। অপরদিকে স্ত্রী বা মাদি কবুতর আকারে তুলনামূলক ছোট হয়।

৪/ পুরুষ বা নর কবুতরের মাথা বড় এবং চ্যাপ্টা হয়।
অপরদিকে স্ত্রী বা মাদি কবুতরের মাথা ছোট এবং লম্বা হয়।

৫/ পুরুষ বা নর কবুতরের চোখ টানা হয়।
অপরদিকে স্ত্রী বা  মাদি কবুতরের চোখ বৃত্তাকার হয়।

৬/ পুরুষ বা নর কবুতরের পা ও এর আঙ্গুল সমান ও অমসৃণ হয়।অপরদিকে স্ত্রী বা মাদি কবুতরের পা ও এর আঙ্গুল প্রায় সমান ও মসৃণ হয়।

৭/ পুরুষ বা নর কবুতরের ঠোঁট ধরে হালকা করে টান দিলে  ছাড়িয়ে নেবার চেষ্টা করে এবং গলা ফুলায়।
অপরদিকে স্ত্রী বা মাদি কবুতর সাধারণত চুপ করে থাকে বা কোন চেষ্টা করে না।

৮/ পুরুষ বা নর কবুতরের ঠোঁট ধরে নিচের দিকে নিলে নর কবুতর টি তার লেজ নিচু করে ধরবে।
অপরদিকে স্ত্রী বা মাদি কবুতরটিকে এমন করলে সে তার লেজ উঁচিয়ে ধরবে।

৯/ উভয় হাতে কবুতর ধরে বুকের খাঁচার মাঝ বরাবর মলদ্বারের কাছাকাছি হাত দিলে দেখা যাবে হাড়ের শেষ প্রান্তে একটি স্পেস আছে, তারপর উক্ত স্পেস এর মধ্যে একটি আঙ্গুল দিয়ে দেখলে ২ টি ছোট পাতলা হাড় পাওয়া যাবে যেটি দেখতে "V"এর মত লাগবে।উক্ত "V" এর মধ্যে যদি  একটি ছোট আঙুল বা তার বেশি ফিট কয়, তবে এটি স্ত্রী বা মাদি কবুতর।
অপরদিকে যদি উক্ত হাড়ের মাঝে ১ বা -২ মিলি ফাঁক থাকে তাহলে এটি পুরুষ কবুতর।

১০/ বাচ্চা জন্ম নেবার  ৩ থেকে ৪ দিন পর যদি আপনি কবুতরের বাচ্চাকে ধরে তার পায়খানা নির্গমনের(vent hole) পথের দিকে খেয়াল করেন তাহলে পুরুষ বা নর কবুতরের পায়খানার রাস্তার মুখ একটু চ্যাপ্টা বা smile সিম্বল এর মত দেখবেন।
অপরদিকে সদি কবুতরটি স্ত্রী বা মাদি কবুতরের হয় তবে পায়খানার রাস্তা সোজা বা গোলাকার বা Happy সিম্বল এর মত দেখাবে।

১১/ রেসার কবুতরের ক্ষেত্রে,সুন্দর করে মাথা হাতের উপর রেখে কবুতরটিকে উল্টিয়ে রাখা হলে যদি কবুতরটি উঠতে চেষ্টা করে বা উঠে যায় তবে সেটি পুরুষ বা নর কবুতর।
অপরদিকে এভাবে করার পর যদি কবুতরটি চুপচাপ শুয়ে থাকে বা উঠতে চেষ্টা না করে তবে তা স্ত্রী বা মাদি কবুতর।

 খ) স্বভাবগত বৈশিষ্ট্যগত পার্থক্যঃ-

১। পুরুষ বা নর কবুতর সাহসী এবং রাগী হবে।
অপরদিকে স্ত্রী বা মাদি কবুতর টি চঞ্চল ও লাজুক কোয়ালিটির হবে।

২। পুরুষ বা নর কবুতরে শরীর অপরিষ্কার থাকে।
অপরদিকে স্ত্রী বা মাদি কবুতরের শরীর তুলনামূলক পরিষ্কার থাকবে।

৩। পুরুষ বা নর কবুতর খুব ঘন ও জোরে জোরে ডাকবে।এবং ডাকার সময় গলা ফুলিয়ে ঘুরে ঘুরে ডাকবে।
অপরদিকে মেয়ে কবুতর থেমে থেমে ও আস্তে আস্তে ডাকবে।

৪। পুরুষ বা নর কবুতর মাদি কবুতরকে হুমকি দিয়ে বা ভয় দেখিয়ে একটি প্রয়াস চালানোর চেষ্টা করে বা মাদীকে চার্জ করবে বা সাধারণত তার মনোযোগ পেতে হালকা ঠোকড় দেয় এবং আঘাত করে যদিও এটি ইচ্ছাকৃত ঠোকর নয়।পাশাপাশি পুরুষ কবুতর গলা ফুলিয়ে এক জায়গা থেকে লেজ নামিয়ে মাদিকে আক্রমন করে আর মাদি মাখা নাড়িয়ে মাথা উপর নিচ করে একই জায়গায় থাকে।

৫। পুরুষ বা নর কবুতর পুরো ঠোঁট ডুবিয়ে পানি পান করে।
অপরদিকে স্ত্রী বা মাদি কবুতর অল্প বা অর্ধেক ঠোঁট ডুবিয়ে পানি পান করে।

৬। পুরুষ বা নর কবুতর সূর্যাস্ত যাবার আগে বেশি অস্থির থাকে।
অপরদিকে স্ত্রী বা মাদি কবুতর শান্ত থাকে।

৭। ডিমে তাপ দেবার সময়কালে পুরুষ বা নর কবুতর সূর্য উঠার পর অর্থ্যাৎ সকালে ডিমে তাপ দেয়ার জন্য অবস্থান নেয় বা বসে।
অপরদিকে স্ত্রী বা মাদি কবুতর সারারাত ডিমে তাপ দিয়ে থাকে।

৮। ব্রিডিং এর আগে পুরুষ বা নর কবুতর মাদির বা স্ত্রী কবুতরের পায়ের কাছে বসে এক ধরনের শব্দ করে।
অপরদিকে স্ত্রী বা মাদি কবুতর নর কবুতরের মুখে, ঘাড়ে ও গলায় ঠোঁট দিয়ে গ্রুমিং করে দেয়। আর মেটিং এর আগে ঠোঁট দিয়ে খওয়ায়ে দেই।

উপরোক্ত আলোচনা থেকে আমরা মোটামুটি নর মাদি চিনতে সক্ষম হব।

সকলের সুস্থ ও দোয়া কমনা করে আজ এখানেই শেষ করছি আবার দেখা হবে নতুন কোন বিষয় নিয়ে।আসা করি সাথেই থাকবেন। নতুন এবং প্রয়োজনীয় পোষ্ট গুলো পেতে আমাদের ব্লগটি Follow  করুন এবং নিচের কমেন্ট বক্সে আপনার মূল্যবান  মতামত দিয়ে আমাদের সংঙ্গে থাকুন। এছাড়াও কোথাও কোন ভুলহলে ক্ষমাসুন্দর দৃৃষ্টিতে দেখার অনুুরোধ রইলো।
আপনাদের ভালোবাসাই আমদের আগামীর পথ চলার পাথেয় ।

আপনাদের সকলের শারীরিক সুস্থতা   ও সকলের কবুতর গুলোর সুস্থতা কমনা করে শেষ করছি। আবার দেখা হবে নতুন কোন বিষয় নিয়ে।সবাই ভালো থাকবেন।

আল্লাহ হাফেজ

তথ্য সংগ্রহে এবং লেখকঃ-
জাকারিয়া হাসান এমরান
Admin
Pigeon Healthcare In BD

 *******Thank You *******

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ